সমাবেশ কেন্দ্র
দুর্যোগে কিংবা জরুরি অবস্থায় এলাকাবাসীদের একত্রিত হওয়ার জন্য যে স্থান বা কেন্দ্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো আসলে কোন একটি এলাকায় আগে থেকে থাকা সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য অবকাঠামো; যেমন স্কুল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, হোটেল কিংবা পুরনো বা পরিত্যক্ত কোন কারখানা ভবন কিংবা সামরিক স্থাপনা যেখানে সংঘাতকালীন সময়ে কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাস্তুচ্যুত মানুষেরা সাময়িকভাবে আশ্রয় নিতে পারেন।
জনসাধারণের একত্রিত হওয়ার উপযোগী এই ধরনের স্থাপনাগুলোতে সাধারণত প্রতিবন্ধীদের চলাচলের উপযোগিতা থাকে না। কারণ বেশিরভাগ আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা অন্যান্য আশ্রয়শিবিরগুলোর অবকাঠামো সাধারণত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের উপযোগী থাকে না। ফলে, একত্রিত হওয়ার মতো কেন্দ্রগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করার জন্য শারীরিক ও ব্যবস্থাপনাগত উভয় ধরনের বাধা দূর করার প্রয়োজন হয়:
- বাধামুক্ত প্রবেশপথ মানে হলো প্রশস্ত দরজা, সিড়ির পরিবর্তে র্যাম্প থাকা কিংবা সিড়ি ও র্যাম্প দু'টোই থাকা, রংয়ের ব্যবহারের ক্ষেত্রে রংগুলো এমন হওয়া দরকার যাতে বিভিন্ন রংয়ের পার্থক্যগুলো সহজেই চোখে ধরা পড়ে এবং নির্দেশনাগুলো বোঝা যায়;
- নিবন্ধনের ডেস্ক যেন প্রবেশগম্য হয়, অর্থাত্ নিবন্ধনের জন্য যে ডেস্ক বা টেবিল ব্যবহার করা হবে সেটা যেন উচ্চতায় ৮০ সেন্টিমিটারের কাছাকাছি হয়, যাতে করে একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী সহজেই ব্যবহার করতে পারেন;
- রুমের বা অবকাঠামোর অভ্যন্তরভাগে চলাচলের সুবিধা যেন থাকে। এই লক্ষ্যে চলাচল সহজ করার জন্য প্রয়োজনে র্যাম্প যোগ করা কিংবা বাধাগুলো অপসারণ করতে হতে পারে, চলাচল পথের মেঝে কিংবা ভূপৃষ্ঠ যদি উচুঁ-নিচু থাকে তাহলে সেগুলো সমান বা সমতল করা এবং এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, দরজাগুলো এবং চলাচলের পথ যেন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীর জন্য যথেষ্ট প্রশস্ত হয়;
- প্রয়োজনে রুমের মধ্যে পার্টিশন বা বিভাজন তৈরি করতে হতে পারে, বিশেষ করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, সুনির্দিষ্টভাবে নারী ও মেয়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য। পর্দা কিংবা প্লাইউড বা বোর্ড দিয়ে এই পার্টিশন অস্থায়ীভাবে তৈরি করতে হবে যাতে করে তারা তাদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনগুলো গোপনীয়তা বজায় রেখে মেটাতে পারে। বিশেষ করে যাদের পক্ষে আশ্রয়কেন্দ্রের নির্দিষ্ট স্থানগুলোতে এই ধরনের প্রয়োজন মেটাতে যাওয়া সম্ভব নয়;
- আশ্রয়কেন্দ্রের সকল অংশ বিশেষ করে চলাচলের পথ ও সকলের ব্যবহারের জন্য উম্মুক্ত স্থানগুলোতে যেন পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে করে ক্ষীণদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিরা যাতে এই জায়গাগুলো সহজেই ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও নারী ও মেয়ে শিশুদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্যও এটি করা গুরুত্বপূর্ণ;
- আশ্রয়কেন্দ্রের বিভিন্ন অংশের পথনির্দেশ ও এগুলো যে প্রবেশগম্য সেটা বোঝাতে উপযুক্ত চিহ্ন বা প্রতীক প্রয়োজনীয় সকল অংশে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করতে হবে;
- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রবেশগম্য লেট্রিন, ওয়াসরুম এবং রান্না করার ব্যবস্থা ও দরকারি ও অভিযোজিত/প্রতিবন্ধী-সহায়ক তৈজসপত্র রাখতে হবে।
একত্রিত হওয়ার বা আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে সাধারণত যে ভবনগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষদের একত্রিত হওয়ার জন্য সাধারণত তৈরি করা হয় না। ফলে, এই ধরনের ভবনগুলো আবাসনের বা বসবাস করার উপযোগী করে তৈরি করা হয় না। তবে হ্যাঁ, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ দেশগুলোতে সরকারিভাবে পরিকল্পনা করে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। যেমন, বাংলাদেশে 'সাইক্লোন সেন্টার' বা 'ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র' নামে উপকূলীয় অঞ্চলে সরকারিভাবে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যেগুলো জরুরি অবস্থায় কিংবা দুর্যোগকালীন সময়ে এলাকাবাসীকে একত্রিত করার কাজে ব্যবহার করা হয়। তবে একথা মনে রাখা আবশ্যক যে, বাস্তুচ্যুত বা সাময়িকভাবে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত ভবনকে শেষ অবলম্বন হিসেবে দেখতে হবে। আর যদি সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট করে আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা থাকে তাহলে সেগুলোতে অবশ্যই যেন প্রতিবন্ধী মানুষদের ব্যবহার উপযোগী হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এই ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অবশ্যই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতামত গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের মধ্যে যেন অবশ্যই নারী প্রতিবন্ধী অন্তর্ভুক্ত থাকেন। তাদের অংশগ্রহণের কারণে এই ধরনের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রবেশগম্য, নিরাপদ ও সুরক্ষা দিক থেকে সঠিক হবে।