অভিযোগ প্রক্রিয়া

অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটি বা সম্প্রদায়ের কাছে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি একদিকে কার্যক্রমে কমিউনিটির মানুষের অংশগ্রহণকে শক্তিশালী করে, অন্যদিকে কর্মসূচির মান বৃদ্ধি করে এবং জালিয়াতি ও বিচ্যুতি রোধে সহায়তা করে। অভিযোগ করার প্রক্রিয়াটি এমন হতে হবে যেন একটি কমিউনিটির সকল মানুষ এটি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়। একটি সমাজের নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে প্রতিবন্ধীসহ সমাজের সকল মানুষকে অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে প্রথমত বিস্তারিতভাবে জানাতে হবে, তাদের কাছে এই প্রক্রিয়াটি সহজলভ্য করতে হবে, এটিতে সকলের প্রবেশগম্যতা থাকতে হবে, কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটা প্রয়োজনে শেখাতে হবে এবং সর্বোপরি অভিযোগের ভিত্তিতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেটাও অভিযোগকারী ও উপযুক্ত ক্ষেত্রে অন্য সকলকে জানাতে হবে।

অভিযোগ গ্রহণ ও ফিডব্যাক জানানোর প্রক্রিয়াটি অবশ্যই যে সম্প্রদায়ের জন্য তাদের শিক্ষা ও সাক্ষরতার স্তর, সুরক্ষার ঝুঁকি, প্রাপ্ত সম্পদ ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা ব্যবস্থার আলোকে, এবং অবশ্যই সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। এছাড়াও এই ব্যবস্থা যাতে সকল ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে; আর এ লক্ষ্যে নিচের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে:

  • মতামত ও অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া গড়ে তোলার জন্য যে পরিকল্পনা ও বাজেট তৈরি করা হবে সেখানে যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমের ব্যবহার করার ব্যবস্থা রাখতে হবে: মৌখিক, লিখিত ও সহজেই পাঠযোগ্য, ব্রেইল, অডিও, মুখোমুখি, ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিংবা মিটিং বা সভার মাধ্যমে;
  • অনেকে অভিযোগ বাক্স ব্যবহার করেন, কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, বেনামে অভিযোগ জানানোর জন্য অভিযোগ বাক্স রাখাটা যারা লিখতে ও পড়তে জানে না কিংবা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এমন ব্যবস্থা কাজ করবে না। অভিযোগ জানানোর জন্য অভিযোগ বাক্স রাখা হলে সকলের যোগাযোগের সুবিধার্থে অন্যান্য ব্যবস্থাও এর সাথে সাথে থাকতে হবে, যেমন: ফোনে অভিযোগ জানানোর জন্য ফোন নাম্বার, ভয়েস মেইল পাঠানোর ব্যবস্থা থাকা ইত্যাদি;
  • মতামত ও অভিযোগ জানানোর প্রক্রিয়া গড়ে তোলা সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থাগুলোর অংশগ্রহণ অবশ্যই থাকতে হবে;
  • দূরবর্তী স্থানে থাকা বা বিচ্ছিন্ন থাকা মানুষদের জন্য হোম ভিজিট বা বাড়ি পরিদর্শন কিংবা ফোন কলের মাধ্যমে যোগাযোগের ব্যবস্থা থাকতে হবে;
  • অভিযোগকারী প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদেরকে সহায়তাকারী পরিবারের সদস্য, কেয়ারগিভার বা ব্যক্তিগত সহকারীদের পরিচয় গোপন রাখা ও তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
  • অভিযোগের ফলো আপ ও ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রবেশগম্য পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

যৌন হয়রানি, অপব্যবহার ও সহিংসতা সম্পর্কে জানানো ও অভিযোগ করার ক্ষেত্রে নারী ও মেয়ে প্রতিবন্ধীরা যাতে নিরাপদে জানাতে পারে এবং জানানোর পর তারা নিরাপদ থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নারী ও মেয়ে প্রতিবন্ধী যারা বধির, কিংবা যাদের মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধিতা কিংবা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধিতা রয়েছে তারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। যেহেতু অপরাধীরা সাধারণত আত্মীয় কিংবা পরিবারের সদস্য হয়ে থাকে এবং নারী ও মেয়ে প্রতিবন্ধীরা তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে, তাই এই বিষয়গুলোকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় রাখতে হবে। আর সে কারণে মানবিক কার্যক্রমে নিয়োজিত মাঠকর্মীদের সুরক্ষা, জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং সংশ্লিষ্ট এমন আরো অনেক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার যাতে করে তারা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ করে নারী ও মেয়ে প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সহায়তা করতে পারে।

Sources
Danish Refugee Council. Complaints Mechanism Handbook. 2008.
CBM. Forthcoming publication. Operational guideline for disability-inclusive cash transfers in humanitarian action. 2018.
CBM, Help Age and Handicap International. Humanitarian inclusion standards for older people and people with disabilities, 2018.
Top of page