প্রতিবন্ধিতা
প্রতিবন্ধিতা হলো শারীরিক, মনোসামাজিক, বুদ্ধিগত এবং/অথবা দৃষ্টি বা শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে ইন্টারঅ্যাকশন বা মিথষ্ক্রিয়া এবং নেতিবাচক মনোভাব ও পরিবেশগত বাধাসমূহ যা তাদেরকে সমতার ভিত্তিতে সমাজে তাদের পূর্ণ ও কার্যকর অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত রাখে বা বাধা দেয় (জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ-সিপিআরডি)।
প্রতিবন্ধিতা এবং মানবিক কার্যক্রম: সিআরপিডি সংঘাত ও জরুরি পরিস্থিতিতে নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে প্রতিবন্ধীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছে (ধারা ১১)। তারা দুর্যোগময় পরিস্থিতিগুলোতে অসম ঝুঁকির সম্মুখীন হয় এবং তারা প্রায়শ মানবিক সহায়তা ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ে। এই ধরনের বাদ পড়ার কারণে জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের পক্ষে সহায়তা ও সেবাগুলোতে প্রবেশগম্য হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো যে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা বৈচিত্র্যপূর্ণ পটভূমি ও সামাজিক উত্স থেকে আসা নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে এবং তাদের সঙ্গে রয়েছে প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ; যাদের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন এবং তাদের জন্য "নির্দিষ্ট একটিই সমাধান" খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় এবং এটি প্রযোজ্যও হবে না।
তাই, মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামর্থ্য, দক্ষতা, সম্পদ ও জ্ঞানকে বিবেচনা করতে হবে।
প্রতিবন্ধী নারী, পুরুষ, মেয়ে এবং ছেলেদের মৌলিক চাহিদাগুলো তাদের সমাজের অন্যান্য মানুষের চাহিদার মতো একই। তাছাড়া, কারো কারো সুনির্দিষ্ট ধরনের চাহিদা থাকতে পারে; যেমন, সহায়ক উপকরণের প্রতিস্থাপনের দরকার হতে পারে, তথ্য জানার জন্য ইশারা ভাষায় ব্যাখ্যা করার দরকার হতে পারে, কাউন্সেলিং কিংবা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা চাহিদা থাকতে পারে এবং পুনর্বাসন সেবাগুলোতে প্রবেশগম্যতার চাহিদা থাকতে পারে। এছাড়াও এটাও মনে রাখতে হবে যে, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য গৃহীত যে কোন ধরনের পদক্ষেপ যেন তাদেরকে তাদের পরিবার ও কমিউনিটি থেকে বিচ্ছিন্ন করে না দেয়।
কোন একটি অসুস্থতা, তীব্র ব্যথা কিংবা জখম দীর্ঘদিন ধরে থাকার ফলে, এর প্রকৃতি বা ধরনের কারণে কিংবা চিকিত্সা নেওয়ার পরিবেশ না থাকার কারণে প্রতিবন্ধিতা তৈরি হতে পারে বা অসুস্থ ও আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়তে পারেন। মানবিক সঙ্কট বা জরুরি পরিস্থিতিতে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া কিংবা অন্য কোন ধরনের বিকলতা/বিকলত্ব যা একজন ব্যক্তির মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে প্রবেশগম্যতা ও অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করে তাকে প্রতিবন্ধিতা হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। এটি গুরুত্বপূর্ণ যে শুধু ব্যক্তির প্রতিবন্ধিতা নয়, তাদের অংশগ্রহণকে সীমিত করে এমন পরিবেশগত ও মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গিগত বাধাগুলোকেও চিহ্নিত/শনাক্ত করা ও স্বীকৃতি দেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
মানবিক সহায়তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে না। কারণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামর্থ্য ও তাদের সম্পর্কে প্রচলিত ধ্যানধারণা ও অপবাদ এক্ষেত্রে বাধা হিসেবে কাজ করে। তাই সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমেই কেবল সহায়তা কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্তি ও অংশগ্রহণ উন্নত করা সম্ভব। নারী ও মেয়ে প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য বিশেষ মনোযোগ ও
কোভিড-১৯ লকডাউনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উচ্চ ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছে:
১. সেবা বিঘ্নিত এবং/অথবা সীমিত হওয়া: স্বাস্থ্য ও পুনর্বাসন সেবাসমূহ, এমনকি বাড়ি-ভিত্তিক ব্যক্তিগত সেবাগুলো পর্যন্ত দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তা পরিস্থিতিতে বিচ্ছিন্ন ও পরিত্যক্ত হতে পারে এবং যার ফলশ্রুতিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মারাত্মক ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা ও স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হতে পারে।
২. অগম্য যোগাযোগ: দুর্যোগ ও জরুরি অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধ এবং অপবাদ ও কলঙ্ক এবং মানসিক চাপ ও পীড়ন কমানোর জন্য যোগাযোগ একটি অপরিহার্য উপাদান। এই অবস্থায় যোগাযোগ অগম্য হয়ে উঠলে ঝুঁকি বাড়ে।
৩. নতুন বাধাসমূহ তৈরি হওয়া: কোভিড-১৯ প্রশমন এবং প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপ যেমন কোয়ারেইনটাইন, শারীরিক দূরত্ব এবং বিচ্ছিন্নতা বা আইসোলেশন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য নতুন ধরনের বাধা বা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
৪. সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি: প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিশেষ করে নারী ও মেয়েশিশু প্রতিবন্ধীরা সমাজের বিদ্যমান সুরক্ষা ব্যবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ সেবাসমূহ ব্যাহত হওয়ায় ঝুঁকির মুখে রয়েছে।